কিভাবে লিখতে হয় সমিতির নীতিমালা
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতির আধিক্য লক্ষণীয়। এই সমিতি পরিচালনা করার জন্য নিয়মনীতি জানা এবং তৈরী করা আবশ্যক। যাতে সমিতি সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমিতির নিয়ম/সংবিধান/ধারা লিখতে গিয়ে প্রয়োজনীয় অনেক কিছু বাদ পড়ে যায়। আজকে সমবায় সমিতির নিয়ম/ধারা/সংবিধান লেখার সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রস্তাবনাঃ “বালুচর সঞ্চয় সমবায় সমিতি” একটি আর্থ সামাজিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। সুদমুক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি গঠনের জন্য, অর্থ সঞ্চয় ও পরিচালা এবং ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করাই এর মূল লক্ষ এবং প্রধান কাজ বলে বিবেচিত হবে। স্থানীয় এলাকার তরুন ও যুব সমাজ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সুদমুক্ত সঞ্চয় ও ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে আত্মনির্ভরশীল জীবন গঠনের জন্য আলাপ আলোচনার মাধ্যমে “বালুচর সঞ্চয় সমবায় সমিতি” নামে একটি সমবায় সমিতি গঠন করে।
সমিতির কার্যক্রম সুশৃঙ্খল ও অবিচল পথ চলার জন্য এর একটি সাংবিধানিক নিয়ম কানুন প্রয়োজন হয়ে পড়ে, সে লক্ষে সমিতির সকল সদস্যগণ নিমোক্ত ধারা/নিয়ম/সংবিধান প্রনয়ণ করেন।
১। সমিতির নাম “বালুচর সঞ্চয় সমবায় সমিতি”।
২। সমিতির মেয়াদকাল তিন বছর। যাত্রা শুরু ১ই অক্টোবর ২০১৫। সমাপ্তি ১ই অক্টোবর ২০১৮ খ্রি:। মেয়াদ শেষ হলে সদস্যগণের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পুণরায় এর মেয়াদ নির্ধারণ করবেন। তবে মেয়াদ শেষ হলে যে সমস্ত সদস্যগণ স্বেচ্ছায় চলে যেতে চাইবেন তারা লভ্যাংশসহ চলে যেতে পারবেন।
৩। সমিতির সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন 3০ জন, তবে কাম্য হলো ৫০ জন। যদি মধ্যবর্তী সময়ে নতুন কোন সসদ্য নিবন্ধিত হতে চায় তাহলে চালু হওয়ার পর থেকে যে কয় মাস অতিবাহিত হয়েছে তার সে কয়মাসের সম্পূর্ণ চাদা দিয়ে ভর্তি হতে পারবে। তবে, সমিতির সঞ্চয় যদি পূর্বে ব্যবসায়িক কাজে চলমান থাকে তাহলে পূর্বের মুনাফা তিনি পাবেন না। ভর্তি হওয়ার পরের মাস থেকে তিনি (নতুন সদস্য) মুনাফার অংশ পাবেন।
৪। প্রত্যেক সদস্যকে ইংরেজী মাসের 01 থেকে 10 তারিখের মধ্যে ১০০০/- (এক হাজার টাকা) সঞ্চয় ফান্ডে জমা দিতে হবে। ১০ তারিখের উর্দ্ধে ২য় মাস পর্যন্ত সময় ক্ষেপন করলে ৫০ টাকা বিলম্ব ফি দিতে হবে। ১-৬ মাস পর্যন্ত এক নাগাড়ে কোন সদস্য সঞ্চয় দিতে অক্ষম হলে তার সদস্য পদ বাতিল বলে গণ্য হবে।
৫। বাতিলকৃত সদস্যের সঞ্চয়কৃত টাকা সমিতির মেয়াদ (তিন বছর) শেষ হলে লভ্যাংশ ব্যতীত প্রদান করা হবে। মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন সদস্য সঞ্চয়কৃত টাকা উত্তোলন করার জন্য কোন প্রকার সামাজিক ও আইনি তদবির করতে পারবেনা।
৬। সমিতিতে কমিটির দুটি স্তর থাকবে।
(ক) নিম্নস্তর কমিটি (খ) উচ্চ স্তর কমিট (ক) নিম্নস্তর কমিটি: সকল সদস্যগণ এই প্রকারের বিবেচিত হবেন। তারা উচ্চস্তর কে সমিতির পরিচালনায় সাহায্য করবেন এবং নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহন ও বাস্তবায়নে অংশ গ্রহন করবেন।
(খ) উচ্চস্তর: কমিটি সমিতির পাঁচ এর এক অংশ এর সদস্য হবেন। তারা নির্বাচিত হবেন নি¤œস্তর সদস্যদের মাধ্যমে। নিম্নস্তরের যে কেউ শর্ত সাপেক্ষে উচ্চ স্তরের সদস্য হতে পারবেন। উচ্চ স্তরের সদস্য থেকে
ক. সভাপতি খ. সহ সভাপতি গ. সেক্রেটারী ঘ. সহ সেক্রেটারী ঙ. ক্যাশিয়ার চ. সহ ক্যাশিয়ার
ছ. পরিদর্শক জ. সহ পরিদর্শক ঝ. দপ্তর সম্পাদক ঞ. প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।
৭।পরিদর্শকের কাছে সমিতির সকল সদস্য স্বচ্ছতা, সত্যতা ও ন্যায় পরায়ণতার জন্য জবাব দিহিতা করতে বাধ্য থাকবেন।
৮। সমিতির মোট চারটি বিভাগ থাকবে-
(ক) পরিচালনা কমিটি (খ) সঞ্চয়ী ফান্ড (গ) বিণিয়োগ ফান্ড (ঙ) লভ্যাংশ ফান্ড
৯। সমিতির সদস্য পদ লাভের জন্য নিজস্ব ফরমে আবেদনপূর্বক ভর্তি হতে হবে এবং ফরম বাবদ ২০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। সদস্য থেকে নেয়া ভর্তির সকল টাকা সমিতির প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করা হবে এবং অবশিষ্ট রিজার্ভ ফান্ডে জমা হবে।
১০। সমিতির মূল ভিত্তি হলো লাভ লোকসানের সমতা বন্টন, অর্থাৎ লাভের যেমন ভাগ পাবে ঠিক তেমনি লসেরও ভাগ নিতে হবে।
১১। বালুচর সঞ্চয় সমিতির সকল ফান্ডের অর্থ সুরক্ষিত করার জন্য ব্যাংকে “চলতি হিসাব’ একাউন্টে জমা রাখা হবে।
১২। কোন সদস্য সমিতিতে একাধিক সদস্যপদ রাখতে পারবেন না। তবে সমিতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য একাধিক সদস্যকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে পারবেন। তবে সেটি ব্যক্তিগত লেনদেন হিসেবে বিবেচিত হবে।
১৩। সমিতির যে কোন প্রয়োজনে পরিচালনা কমিটি যদি নিম্নস্তরের সদস্যকে আহব্বান করে কিংবা মিটিং এর ডাক দেন তাহলে প্রত্যেক সদস্যের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
১৪। প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার পর দুটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সমিতির পর্যালোচনা, মূল্যায়ণ, বাৎসরিক আয় ব্যয়ের উপর প্রতিবেদন পেশ করা হবে।
১৫।পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত সর্বোতভাবে কার্যকর বলে বিবেচিত হবে।
১৬। সমিতির যে কোন পদের সদস্য থেকে সংবিধানে প্রণীত নীতিমালার পরিপন্থী কোন কাজ প্রকাশ পেলে তাকে সাময়িক বাতিল কিংবা স্থায়ী বাতিল যেকোন ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহন করার অধিকার রাখবে সমিতি কর্তৃপক্ষ।
এছাড়াও নতুন কোন সমস্যা দেখা দিলে বিভাগীয় পরিচালনা কমিটি সভা আহব্বান করে সকল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে সমাধান দিতে পারবেন। তবে 60% এর অধিক সমর্থন থাকতে হবে।